মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট বাজারে মানুষের চাপ বেশি থাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক প্রশস্ত করার সময় আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই দুই পাশে অবৈধভাবে দোকান বসান কিছু ব্যবসায়ী। পরে ধীরে ধীরে পুরো অংশই দখল করে নিয়েছেন তারা। সেখানে রয়েছে ফল থেকে শুরু করে কাপড়ের দোকানও। নিম্ন আয়ের অনেক ক্রেতা এখান থেকে ঈদের কেনাকাটা করছেন। এতে ভিড় লেগেই থাকে। ফলে যানজট ছড়িয়ে পড়ছে মহাসড়ক পর্যন্ত।
স্থানীয় গন্তব্যে যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য আন্ডারপাস দিয়ে চলাচল করে লোকাল বাস। এমন একটি বাসের চালক আব্দুল আলিম হোসেন বলছিলেন, ধাপেরহাট স্টপেজ আছে। কিন্তু এখানে এলেই যানজটে আটকা পড়তে হয়। আন্ডারপাসের দুপাশে দোকান বসায় ক্রেতা ভিড় জমান। এর সঙ্গে ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত থ্রি-হুইলারের কারণে বেশি যানজট লেগে থাকে। এতে গাড়িতে বসে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।
ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ধাপেরহাট বাজারের আন্ডারপাস এভাবে ব্যবসায়ীরা দখলে নেওয়ায় একটু পর পরই যানজট দেখা দিচ্ছে মহাসড়কে। বিশেষ করে সোম ও বৃহস্পতিবারে স্থানীয় হাটবার হওয়ায় বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মানুষ। ঈদযাত্রায়ও যাত্রীদের যানজট ভোগাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হলেও দোকান সরানো হয়নি।
স্থানীয়দের ভাষ্য, কৃষিপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাবেচার জন্য মহাসড়কের ওপর ধাপেরহাটে প্রতিদিন সকাল থেকে বাজার বসে। বড় হাট বসে সপ্তাহে দুই দিন। পলাশবাড়ী এবং রংপুরের পীরগঞ্জের মধ্যবর্তী হওয়ায় বাজারটি বেশ পরিচিত। এলাকায় সুপরিচিত পচাহলুদ, গরু-ছাগল, রিকশা-ভ্যান ও বাইসাইকেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচার জন্য কয়েকটি উপজেলার মানুষ আসেন এ বাজারে।
রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের যাত্রীবাহী বাসসহ পণ্য পরিবহনের গাড়ি এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে বলে জানান শ্রমিক সংগঠনের চেইনমাস্টার হায়দার আলী। তিনি বলেন, লোকাল বাস বেশি চলে আন্ডারপাস দিয়ে। তবে ক্রেতারা কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকায় পথচারী ও যানবাহন চলাচলে সমস্যা হয়। এতে ভিড় জমে মহাসড়ক পর্যন্ত। যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস।
একই ধরনের কথা বলেন ধাপেরহাট বাজার বণিক সমিতির সভাপতি নুর মোহাম্মদ মিলন। তাঁর ভাষ্য, দিনের বেলায় এবং রাতের কিছু সময় থাকে যানজট। অবৈধ দখলদারদের কারণে মূলধারার ব্যবসায়ীরাও সমস্যায় পড়ছেন। দোকানে বিক্রি কমেছে। এ কারণে আন্ডারপাসের ব্যবসায়ীদের সমিতির সদস্য বানানো হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, এখানে যানজটে মানুষ ভোগান্তির শিকার হলেও অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে নিতে প্রশাসনের উদ্যোগ নেই। এতে নির্বিঘেœ ব্যবসা করছেন কিছু মানুষ। এর সমাধান না হলে ভোগান্তি বাড়বে বলে জানালেন ধাপেরহাট আঞ্চলিক শাখা মোটর-ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন ম-ল হিরু।
যদিও আন্ডারপাসে অবৈধভাবে বসা দোকানিদেরও দিতে হয় হাট-বাজারের টোল। দোকানি খাজা ম-ল বলেন, ইজারাদারের লোকেরা টোল আদায় করেন। এ কারণে তারা দোকান সরাবেন না।
মহাসড়ক বড় করায় অনেকের দোকান ভাঙতে হয়েছে। আন্ডারপাসে না বসলে পরিবার না খেয়ে থাকতে হবে। আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের কাছ থেকে টোলের টাকা নেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত করে ইজারাদার মকবুলার রহমান রিপন জানান, এখানকার দোকানিরা বাজারের ভেতরে বসেন না।
আন্ডারপাস থেকে দোকান উচ্ছেদ করা কষ্টকর বলে জানান ধাপেরহাট ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন। তাঁর দাবি, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা সভায় একাধিকবার উপস্থাপন করা হলেও কাজ হয়নি। ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শিপন বলেন, তিনি দায়িত্ব নিয়ে গ্রাম পুলিশ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এজন্য প্রশাসনের সহায়তা প্রয়োজন।
উচ্ছেদ অভিযান চালাতেও কিছু নিয়ম মানতে হয়। তবে স্থানীয়রা চাইলে নিজেরা আন্ডারপাসের অংশ ফাঁকা করতে পারবেন বলে জানান উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও ইউএনও কাওছার হাবিব। তাঁর ভাষ্য, সড়কে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দোকান বসানো যাবে না। ঈদযাত্রা নিরাপদ ও ভোগান্তি মুক্ত করতে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
ধাপেরহাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) শুকুর আলী বলেন, আন্ডারপাস থেকে দোকানগুলো একাধিকবার সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সুযোগ পেলে আবার বসে। এজন্য স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী গোপনে কাজ করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঈদের আগে ফের সবাইকে নিয়ে বসে ওই অংশ যানজটমুক্ত রাখার চেষ্টা করা হবে।